বর্তমান বাংলাদেশে সমাজসেবা ও মানবিক কার্যক্রমে যে কয়টি প্রতিষ্ঠান সাধারণ মানুষের আস্থার শীর্ষে পৌঁছেছে, তার মধ্যে আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশন (As-Sunnah Foundation) অন্যতম। প্রথাগত সাহায্য সংস্থার বাইরে গিয়ে টেকসই উন্নয়ন এবং স্বচ্ছতার মাধ্যমে এই সংগঠনটি স্বল্প সময়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।
আজকের ফিচারে আমরা জানব, কীভাবে আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশন দেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে পরিবর্তন আনছে।
আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশন কী?
আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশন একটি অরাজনৈতিক, অলাভজনক শিক্ষা ও সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান। ২০১৭ সালে বিশিষ্ট ইসলামিক ব্যক্তিত্ব শায়খ আহমাদুল্লাহ এই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। এর মূল লক্ষ্য হলো শিক্ষা, সেবা এবং দাওয়াহ এই তিনের সমন্বয়ে একটি আদর্শ ও কল্যাণকর সমাজ গঠন করা।
কেন এই ফাউন্ডেশনটি অন্যদের চেয়ে আলাদা?
গতানুগতিক দাতা সংস্থার বাইরে তাদের কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো:
- স্বাবলম্বীকরণ প্রজেক্ট: শুধুমাত্র ত্রাণ দিয়ে দায়িত্ব শেষ না করে, দরিদ্র মানুষকে রিকশা, ভ্যান, বা সেলাই মেশিন দিয়ে স্থায়ী আয়ের ব্যবস্থা করা।
- শতভাগ স্বচ্ছতা: প্রতিটি অনুদানের হিসাব এবং প্রজেক্টের আপডেট তাদের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ ও ওয়েবসাইটে নিয়মিত প্রকাশ করা হয়।
- অরাজনৈতিক অবস্থান: সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক হওয়ায় সব শ্রেণি-পেশার মানুষ নির্দ্বিধায় এখানে দান করতে পারেন।
- প্রযুক্তি ও আধুনিকতা: অনলাইন ডোনেশন সিস্টেম এবং ডিজিটাল অডিটের মাধ্যমে তারা কার্যক্রম পরিচালনা করে, যা তরুণ প্রজন্মের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়িয়েছে।
আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের উল্লেখযোগ্য কার্যক্রমসমূহ
নিচে প্রধান প্রজেক্টগুলো তুলে ধরা হলো:
১. দুর্যোগকালীন ত্রাণ সহায়তা
সিলেটের বন্যা হোক বা উত্তরবঙ্গের শীত দুর্যোগের মুহূর্তে সবার আগে দুর্গত এলাকায় পৌঁছায় আস সুন্নাহর স্বেচ্ছাসেবী দল। তাদের ত্রাণ প্যাকেজে চাল-ডাল থেকে শুরু করে শিশু খাদ্য ও ঔষধ পর্যন্ত অন্তর্ভুক্ত থাকে।
২. স্বাবলম্বীকরণ প্রকল্প
এটি তাদের ‘ফ্ল্যাগশিপ’ প্রজেক্ট। ভিক্ষুকমুক্ত সমাজ গড়ার লক্ষ্যে তারা হাজার হাজার মানুষকে ক্ষুদ্র ব্যবসার পুঁজি এবং উপকরণ সরবরাহ করেছে।
৩. শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা
দরিদ্র শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান, মসজিদ-মাদরাসা নির্মাণ এবং ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের আয়োজন করা তাদের নিয়মিত কাজের অংশ।
৪. পরিবেশ রক্ষা ও বৃক্ষরোপণ
প্রতি বছর বর্ষাকালে সারাদেশে লক্ষাধিক ফলজ ও বনজ বৃক্ষরোপণ করে পরিবেশ রক্ষায় তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
সাধারণ মানুষের আস্থার কারণ
সোশ্যাল মিডিয়া এবং ইন্টারনেটে “আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশন ডোনেশন” এখন আস্থার এক নাম। এর পেছনের কারণগুলো হলো:
- শায়খ আহমাদুল্লাহর গ্রহণযোগ্যতা: প্রতিষ্ঠাতার ব্যক্তিগত সততা এবং পরিমিতি বোধ।
- ভিজুয়াল প্রমাণ: কাজের ভিডিও এবং ছবি নিয়মিত শেয়ার করা, যা দাতার মনে প্রশান্তি আনে।
- দ্রুত সাড়া প্রদান: যেকোনো জাতীয় সংকটে তারা আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ছাড়াই দ্রুত মাঠে নামে।
কীভাবে যুক্ত হবেন বা অনুদান পাঠাবেন?
আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের কার্যক্রমে শরিক হতে চাইলে তাদের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট ভিজিট করতে পারেন। সেখানে বিকাশ, নগদ, রকেট বা ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে নিরাপদ উপায়ে ডোনেশন করার ব্যবস্থা রয়েছে।
সতর্কতা: প্রতারণা এড়াতে সর্বদা আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ বা অফিশিয়াল ওয়েবসাইট (assunnahfoundation.org) থেকে তথ্য যাচাই করে নেবেন।
(FAQs)
প্রশ্ন: আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা কে?
উত্তর: বিশিষ্ট ইসলামিক আলোচক শায়খ আহমাদুল্লাহ।
প্রশ্ন: এই ফাউন্ডেশন কি কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত?
উত্তর: না, আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশন সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক একটি সেবা সংস্থা।
প্রশ্ন: তাদের প্রধান কার্যালয় কোথায়?
উত্তর: তাদের প্রধান কার্যালয় ঢাকার বাড্ডায় অবস্থিত (সাঁতারকুল রোড)।
শেষ কথা
মানবতার সেবায় আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশন যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, তা বাংলাদেশের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর জন্য এক অনন্য মডেল। আপনি যদি নির্ভরযোগ্য কোনো মাধ্যমে যাকাত বা সদকা প্রদান করতে চান, তবে এই ফাউন্ডেশনটি হতে পারে আপনার প্রথম পছন্দ।
